গুম হওয়া মানুষেরা কোথায়?

গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন৷ তাদের বড় একটি অংশই আর ফিরে আসেননি৷ তারা আদৌ আর কখনো ফিরে আসবেন কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই৷

  • আওয়ামী লীগ আমলে এক দশকে তিন হাজার বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড: ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই সরকারের অধীনে এদেশে প্রায় তিন হাজার মানুষ পুলিশ, র‌্যব – ডিবির হাতে বিচারবর্হিভুত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। এদের অধিকাংশই বিরোধী দলের নেতা-কর্মী। গত ১০ বছর সময়ের মধ্যে এই দেশের জেল কাস্টডিতে মারা গেছে ৭৯৫ জন মানুষ, গুম হয়েছে ৬০১ জন, ধর্ষনের শিকার হয়েছেন ৭৮০৬ জন নারী, ১৯৩৪ জন শিশু নির্যাতিত হয়েছে, ১৮ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে।” দি ইনকিলাব।
  • অন্যসূত্রথেকে তথ্য বলছে বাংলাদেশে ১০ বছরে গুম এবং খুন ,৬৬০ জন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য আনুযায়ী, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গত দশ বছরে ৬,৬৬০ জন নাগরিক গুম এবং হত্যা কান্ডের স্বিকার হয়েছেন। স্বামী, সন্তান বা আপন ভাই গুম হয়ে যাবার অসংখ্য ঘটনার শিকার পরিবারগুলোতে কান্না আর আহাজারি দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। সুত্রঃ Bangladesh Today (Oneline Potrika), এপ্রিল ২৮, ২০১৯
  • শাহদীন মালিক বলেন, ১৯৭১ সালেও অনেকে গুম হয়েছেন। কিন্তু সেই গুমের সাথে জড়িত ছিল পাকিস্তানি আর্মি। কিন্তু এখন একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিকরা গুম হবেন এটা মেনে নেয়া যায় না। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বনানী থেকে গুম হন বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী। গুম হওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যেসাধারন জনতা, সাবেক এম.পি, আর্মি  সাবেক অফিসার, রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গ এবং ব্যবসায়ি রয়েছেন।
  • ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এমন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড গুমের শিকার হয়ে পৃথিবী থেকেনাইহয়ে গেছেন ১৮৯২ জন হতভাগ্য মানুষ সুত্রঃ নয়া দিগন্ত
  • পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ পর্যন্ত মোট মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৯০ হাজার ৩৪০টি, মোট আসামীর সংখ্যা ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ জন, কারাগারে বন্দি ৭৫ হাজার ৯২৫ জন, মোট হত্যার সংখ্যা হাজার ৫১২ জন এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দ্বারা বিএনপি নেতাকর্মীর হত্যার সংখ্যা ৭৮২ জন
  • মানবাধিকার সংস্থা আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুয়ায়ী গত ১৩ বছরে গুম হওয়া  ৬০৪ জনের মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে৷ ৮৯ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন কোনো না কোনোভাবে ফিরে এসেছেন অন্যরা কোথায় আছেন, কেমন আছেন তার কোনো তথ্য নাই পরিবারের কাছে৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কোনো তথ্য দিতে পারছে না৷
  • র‌্যব, ডিবি, পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে বিভিন্ন সময়ে ওইসব ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে৷ পরিচিত কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ অথবা আলোচনা বা আলোড়ন সৃষ্টি না হলে খুব কমই উদ্ধারের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়৷
  • এইচআরডব্লিউ বলছে, ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ৪৮টি নিখোঁজের অভিযোগ পাওয়া গেছেগোপন হেফাজতে নির্যাতন রূঢ় আচরণের অনেক অভিযোগ আছে

(খ) বন্দুকযুদ্ধেরশিকার সুত্রঃ Parts Today (Oneline Potrika) আগস্ট ১৩, ২০২০

সিনহা হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে এই প্রশ্ন উঠছে ক্রসফায়ার কি আদৌ বন্ধ হবে? মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘সিনহা হত্যাই প্রথম বা শেষ নয়৷ গত ১৫ বছর ধরে এই ক্রসফায়ার চলছে৷ (৩,০০০) তিন হাজারের বেশি মানুষ ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন৷

  • ২০২০ সালেও চলতি বছরেই এ পর্যন্ত ১৮৪ জন ‘বন্দুকযুদ্ধের’ শিকার হয়েছেন৷গত ৩১ শে জুলাই টেকনাফের মেরিন ড্রাইভে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগের ঘটনা।
  • ২০১৯ সালেও এই ধারা অব্যাহত আছে৷ বছরের একমাস বাকি থাকতেই ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩৬১ জনে৷
  • ২০১৮ সালে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময়, এনকাউন্টার এবং হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৬৬৷
  • ২০১৭ সালে নিহত হয়েছেন ১৬২ জন৷
  • বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সরকারের অধীনে এ দেশে প্রায় তিন হাজার মানুষ পুলিশ, র‌্যব, ডিবির হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।  এদের অধিকাংশই বিরোধী দলের নেতাকর্মী।

(গ) পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু

  1. মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মোট ১৮ জন মারা গেছেন৷
  2. ২০১৮ সালে ১৭ জন ও
  3. ২০১৭ সালে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল৷
  4. মির্জা ফখরুল বলেন, (2008 to 2018 )‘ ১০ বছর সময়ের মধ্যে দেশে জেল কাস্টডিতে মারা গেছেন ৭৯৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন হাজার ৮০৬ জন নারী হাজার ৯৩৪ জন শিশু নির্যাতিত হয়েছে। ১৮ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে এক লাখের ওপর রাজনৈতিক মামলা হয়েছে এই চিত্র বলে দেয় লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, লাখো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতার স্বদেশ প্রিয় জন্মভূমি আজ মৃত্যু উপত্যকা, জল্লাদের রঙ্গমঞ্চ।
  5. আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের প্রতিরোধে একটি আইন ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হলেও, এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে৷ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী কেউ নির্যাতনের শিকার হলে আদালতে অভিযোগ করতে পারেন৷ শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন প্রমাণিত হলে শাস্তি হিসেবে ন্যূনতম বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে৷ এছাড়া নির্যাতনের ফলে মৃত্যু হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড হতে পারে৷ 
  6. সরা দেশব্যাপি ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ আছে অগনিত। এমনও শোনা যায় যে, বিভিন্ন মামলা, মাদকের মামলা এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে কতিপয় পুলিশের সদস্য হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ধরুন বিএনপির মামলা ৪০ লক্ষ, অন্যান্য ৫ লাখ মোট ৪০ লাখ গড়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ হলেও ২০ হাজার কোটি টাকা তাদের মামলা বাবদ খরচ হয়েছে।
  7. বিনা বিচারে মানুষ খুন-গুম কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে যায় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধান এটা সমর্থন করে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য, ভিন্নমতকে দমন করার জন্য এ ধরনের খুন-গুম-অত্যাচার আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা-২ (২) (ক) এর অধীন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবেও গণ্য হতে পারে। তাই আমরা বারবার বলতে চেয়েছি, আজকের আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
  8. গণতন্ত্রের বিপক্ষে গিয়ে স্বৈরাচারী পথে হেঁটে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে বর্তমান সরকার আমরা অবস্থার অবসান চাই, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড বন্ধ চাই, সাংবিধানিক শাসন চাই, খুনগুমের রাজনীতি বন্ধ চাই, সব বিনাবিচারে হত্যাগুমখুনের বিচার চাইরাজনৈতিক এবং সন্ত্রাসী কর্তৃক খুন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনি কর্তৃক এবং (Judicial Killing  যদি হয়ে থাকে) সহ সমস্ত খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *