মোঃ মানসুর আলম সিকদার, এমবিএ, এল এল.বিঃ সার্কুলার নং নন-লাইফ ১০৬/২০২৫ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ Lead Co-insurer কে Submission এর সময় অন্যান্য Co-insurer এর Placement সহ Submission দাখিল করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। লিড কো-ইনসিওরারকে অন্যান্য কো-ইনসিওরারদের প্লেসমেন্টসহ সাবমিশন দাখিল করার ক্ষেত্রে কিছু সম্ভাব্য সমস্যা ও জটিলতা দেখা দিতে পারে। যদিও এটি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে, তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। নিম্নে প্রধান সমস্যাগুলো তুলে ধরা হলো:
১. গোপনীয়তার লঙ্ঘন (Breach of Confidentiality):
- গোপনীয়তা চুক্তি: প্রতিটি কো-ইনসিওরারের সাথে বীমাকৃতের (insured) একটি আলাদা চুক্তি থাকে এবং এই চুক্তিগুলোতে প্রায়শই গোপনীয়তার শর্তাবলী (confidentiality clause) অন্তর্ভুক্ত থাকে। লিড কো-ইনসিওরারকে অন্য কো-ইনসিওরারদের প্লেসমেন্টের বিস্তারিত তথ্য, যেমন – প্রিমিয়ামের হার, শর্তাবলী, এবং বীমার অংশ (share), জানানো হলে তা এই গোপনীয়তার শর্ত লঙ্ঘন করতে পারে।
- তথ্যের অপব্যবহারের ঝুঁকি: লিড কো-ইনসিওরার যদি অন্যান্য কো-ইনসিওরারদের ব্যবসায়িক তথ্য (যেমন – তারা কোন শর্তে ঝুঁকি গ্রহণ করছে) জেনে যায়, তবে তারা ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নেওয়ার জন্য এই তথ্য ব্যবহার করতে পারে।
২. প্রতিযোগিতামূলক অসুবিধা (Competitive Disadvantage):
- দর কষাকষির ক্ষমতা হ্রাস: যদি লিড কো-ইনসিওরার আগে থেকেই জেনে যায় যে অন্যান্য কো-ইনসিওরাররা কোন শর্তে এবং কোন প্রিমিয়ামে ঝুঁকি নিতে রাজি হয়েছে, তবে বীমাকৃতের দর কষাকষির (negotiation) সুযোগ কমে যেতে পারে। লিড কো-ইনসিওরার তখন আরও কঠিন শর্ত আরোপ করতে পারে।
- বাজার দখলের চেষ্টা: লিড কো-ইনসিওরার যদি অন্যান্য কোম্পানির দুর্বলতা বা ঝুঁকির সীমা সম্পর্কে জানতে পারে, তবে তারা ভবিষ্যতে সেই বাজারের অংশীদারিত্ব দখলের চেষ্টা করতে পারে।
৩. প্রশাসনিক জটিলতা (Administrative Complexity):
- সমন্বয়ের অভাব: সমস্ত কো-ইনসিওরারদের কাছ থেকে তাদের প্লেসমেন্টের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে তা একত্রিত করা একটি সময়সাপেক্ষ এবং জটিল প্রক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে যদি অনেকগুলো কো-ইনসিওরার জড়িত থাকে।
- ভুলের সম্ভাবনা: তথ্য সংগ্রহ এবং জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ভুলভ্রান্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা পরবর্তীতে বীমা দাবি নিষ্পত্তির সময় জটিলতা তৈরি করতে পারে।
৪. নীতিগত ও নিয়ন্ত্রক সমস্যা (Ethical and Regulatory Issues):
- স্বার্থের সংঘাত (Conflict of Interest): লিড কো-ইনসিওরার এবং অন্যান্য কো-ইনসিওরাররা একে অপরের প্রতিযোগী। তাদের ব্যবসায়িক তথ্য একে অপরের সাথে শেয়ার করা হলে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হতে পারে, যা বীমা শিল্পের নৈতিকতার পরিপন্থী।
- নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধিনিষেধ: কোনো কোনো দেশের বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা (Insurance Regulatory Authority) এক কোম্পানির ব্যবসায়িক তথ্য অন্য কোম্পানির কাছে প্রকাশ করার বিষয়ে কঠোর নিয়মকানুন আরোপ করতে পারে। এই ধরনের তথ্য শেয়ার করা আইনত দণ্ডনীয়ও হতে পারে।
করণীয় কী?
সাধারণত, লিড কো-ইনসিওরারকে শুধুমাত্র এইটুকু জানানোই যথেষ্ট যে মোট ঝুঁকির ১০০% বিভিন্ন স্বনামধন্য কো-ইনসিওরারদের দ্বারা কভার করা হয়েছে। প্রতিটি কো-ইনসিওরারের প্লেসমেন্টের বিস্তারিত তথ্য লিড কো-ইনসিওরারকে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বীমা ব্রোকার বা বীমাকৃত ব্যক্তিLead co-insurer কে submission এর সময় অন্যান্য co-insurer এর placement সহ submission দাখিল করতে অ-সুবিধাগুলো কি কি?
লিড কো-ইন্স্যুরারকে (Lead Co-insurer) সাবমিশনের সময় অন্যান্য কো-ইন্স্যুরারদের প্লেসমেন্টসহ (Placement) সাবমিশন দাখিল করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অসুবিধা দেখা দিতে পারে। এই অসুবিধাগুলো মূলত কৌশলগত, বাণিজ্যিক এবং প্রশাসনিক প্রকৃতির হয়ে থাকে। নিম্নে প্রধান অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো:
১. প্রতিযোগিতামূলক অসুবিধা (Competitive Disadvantage):
- তথ্য ফাঁস: লিড ইন্স্যুরার যখন তার সাবমিশনে অন্যান্য কো-ইন্স্যুরারদের নাম, তাদের শেয়ার এবং শর্তাবলী উল্লেখ করে দেয়, তখন এই তথ্য প্রতিযোগী ব্রোকার বা অন্যান্য ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রতিযোগীরা এই তথ্য ব্যবহার করে ক্লায়েন্টকে ভিন্ন বা তুলনামূলক ভালো প্রস্তাব দিয়ে ব্যবসা নিজেদের অনুকূলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
- বাজার দখলের চেষ্টা: প্রতিযোগীরা জানতে পারে কোন কোন কো-ইন্স্যুরার এই নির্দিষ্ট ঝুঁকি নিতে আগ্রহী। তারা সরাসরি সেই কো-ইন্স্যুরারদের সাথে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে প্লেসমেন্ট সাজানোর চেষ্টা করতে পারে, যা লিড ইন্স্যুরারএর অবস্থানকে দুর্বল করে দেয়।
২. আলোচনার সুযোগ কমে যাওয়া (Reduced Negotiation Power):
- শর্তাবলী নিয়ে দর কষাকষি: লিড ইন্স্যুরার প্রতিটি কো-ইন্স্যুরারের সাথে আলাদাভাবে শর্তাবলী এবং প্রিমিয়াম নিয়ে আলোচনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্লেসমেন্ট সম্পন্ন করে। যদি শুরুতেই সম্পূর্ণ প্লেসমেন্ট দাখিল করতে হয়, তাহলে পরবর্তীতে ক্লায়েন্ট বা অন্য কোনো পক্ষের সাথে আলোচনার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।
- ক্লায়েন্টের চাপ: ক্লায়েন্ট যদি দেখে যে সম্পূর্ণ প্লেসমেন্ট এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে তারা লিড ইন্স্যুরারের উপর আরও ভালো শর্ত বা কম প্রিমিয়ামের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, প্লেসমেন্ট চূড়ান্ত দেখলে ক্লায়েন্ট ভাবতে পারে যে, লিড ইন্স্যুরারের হাতে আর আলোচনার সুযোগ নেই।
৩. গোপনীয়তা লঙ্ঘন (Breach of Confidentiality):
- প্রত্যেক কো-ইন্স্যুরারের সাথে লিড ইন্স্যুরারের চুক্তি এবং শর্তাবলী অনেক সময় গোপনীয় থাকে। সাবমিশনের সময় সকল কো-ইন্স্যুরারের বিস্তারিত তথ্য দাখিল করলে, তা এই গোপনীয়তার শর্ত লঙ্ঘন করতে পারে। কোনো কো-ইন্স্যুরার তাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি অন্য প্রতিযোগীদের কাছে প্রকাশ করতে নাও চাইতে পারে।
৪. প্রশাসনিক জটিলতা ও সময়ের অপচয়:
- সমন্বয়ের অভাব: একটি বড় প্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে একাধিক কো-ইন্স্যুরারের সাথে যোগাযোগ, আলোচনা এবং তাদের সম্মতি আদায় করা একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সাবমিশনের সময়সীমার মধ্যে সকলের চূড়ান্ত সম্মতিসহ প্লেসমেন্ট দাখিল করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
- তথ্য পরিবর্তন: প্রাথমিক সম্মতি (indication) এবং চূড়ান্ত সম্মতির (confirmation) মধ্যে কো-ইন্স্যুরারদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসতে পারে। যদি কোনো কো-ইন্স্যুরার শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ায় বা তাদের শেয়ার পরিবর্তন করে, তাহলে দাখিলকৃত সাবমিশনটি ভুল প্রমাণিত হবে এবং লিড ইন্স্যুরারকে নতুন করে সব সাজাতে হবে, যা তার পেশাদারিত্বের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৫. ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি:
- যদি সাবমিশনে উল্লেখিত কোনো কো-ইন্স্যুরার পরবর্তীতে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে ক্লায়েন্টের কাছে লিড ইন্স্যুরারের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। ক্লায়েন্ট ভাবতে পারে যে, লিড ইন্স্যুরার সঠিক তথ্য না দিয়েই সাবমিশন জমা দিয়েছে।
৬. লিড ইন্স্যুরারের কর্তৃত্ব হ্রাস:
- সাধারণত, লিড ইন্স্যুরার পুরো ডিলটি পরিচালনা করে এবং তার নেতৃত্বে অন্যান্যরা অংশগ্রহণ করে। কিন্তু শুরুতেই যদি সকলের তথ্য প্রকাশ করে দেওয়া হয়, তাহলে ক্লায়েন্ট বা অন্যান্য পক্ষ সরাসরি অন্য কো-ইন্স্যুরারদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে পারে, যা লিড ইন্স্যুরারের কর্তৃত্ব এবং পুরো প্রক্রিয়ার উপর তার নিয়ন্ত্রণকে খর্ব করে।
এই সমস্ত কারণে, সাধারণত লিড ইন্স্যুরার একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত প্লেসমেন্টের সম্পূর্ণ চিত্র গোপন রাখতে চায় এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্য ক্লায়েন্ট বা সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে প্রকাশ করে। সম্পূর্ণ চিত্রটি সাধারণত পলিসি চূড়ান্ত হওয়ার সময়ে প্রকাশ করা হয়।