আইডিআরএ’র ব্যয় সংকোচন নীতিটি আশাব্যঞ্জক কিন্তু চলমান পরিসস্থিতিতে পরিপালন অসম্ভব!!!

আইডিআরএ’র বীমা-প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় সংকোচন করতে চাচ্ছে কিন্তু এই নীতিতে উদ্বিগ্ন অনেক বীমা কোম্পানি। চলমান সময়ে নন-লাইফে প্রচলিত অবৈধ কশিন প্রথা চালু না থাকলে বীমা-প্রতিষ্ঠানগুলোর আইডিআরএ’র ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরন করা প্রায় অসম্ভব। তাই এই প্রতিযোগিতায় বিদ্যমান ব্যয় সীমা মানতে পারেনি অনেক বীমা কোম্পানি। প্রস্তাবিত ব্যয়সীমা কার্যকর হলে আরও বিপাকে পড়বে এসব কোম্পানি। তাই বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর নতুন ব্যয় সংকোচন নীতিতে উদ্বিগ্ন অনেক বীমা কোম্পানি। 

দেশের ব্যবসা বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। আমদানি রপ্তানি কম। ঋণপত্র খোলা নিম্নগামী। তাই অনেক কোম্পানির ব্যবসা দন্য দসা চলছে। বর্তমান বেতন কাঠামোতে জীবন যাপনের ব্যয় নির্বাহ করা কষ্টকর। অনেকেই মনে করছে এখন ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমালে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাদের কর্মস্পৃহা কমবে। উৎসাহ হ্রাস পাবে। ব্যবসা বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ব্যবসা করা অনেক কঠিন। সংকোচিত সীমা পালন অনেকের জন্য আরও কষ্টকর হবে। দিন দিন খরচের খাত বাড়ছে। আইডিআরএ নানা রকম ফি আরোপ করছে। খরচের সীমা পালনে যারা ব্যর্থ হয়েছে আইডিআরএ তাদের বারবার সতর্ক করেছে। এ অবস্থায় আরও ব্যয় সংকোচন বীমা খাতের বিকাশকে অনেক বাধাগ্রস্ত করবে।     

আগের ব্যয়সীমা অনেক কোম্পানি পালন করতে পারছে না। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম আইডিআরএ’র ব্যয় সংকোচন নীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কমিশন বানিজ্য বন্ধ না হলে বীমা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অপ্ররিরোদ্ধ কমিশন ব্যবস্থার লাগাম টেনে না ধরতে পারলে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে আইডিআরএ’র সিদ্ধান্ত পরিপালন করা প্রায় অসম্ভব। তবে এ কথাও সঠিক যে, ব্যয় কমানো যদিও অনেক কঠিন তবুও প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্থে ব্যয় কমাতে হবে। ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেক কোম্পানি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ব্যয় না কমালে বীমা কোম্পানিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করা যাবে না। অনেক নন-লাইফ প্রতিষ্ঠানগুলো গভির খাদের দ্বার প্রান্তে দ্বাড়িয়ে নয় পড়ে গেছে বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করছে।

বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা এবং কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে ‘বীমাকারীর রেজুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ করতে যাচ্ছে সরকার। এর মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হ্রাস, সমস্যাগ্রস্ত বীমা কোম্পানিকে দেউলিয়া ঘোষণা এবং প্রয়োজনে পরিচালকদের ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি করে দাবি নিষ্পত্তির ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’কে।     

অধ্যাদেশটিতে বলা হয়েছে, বীমাকারীর মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকট, দেউলিয়াত্ব বা অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ অন্য যেকোনো ঝুঁকির সময়োপযোগী সমাধান, আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ এবং উহার সহিত সম্পর্কিত বা আনুষঙ্গিক বিষয়ে বীমাকারীর রেজুলেশন সংক্রান্ত বিষয়ে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, বার্ষিক প্রিমিয়াম ভিত্তিক নীতিতে প্রথম বছরের ব্যবস্থাপনা খরচ ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হবে। কিস্তি ভিত্তিক নীতিতে তা ১০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৭ শতাংশ করা হবে। গ্রুপ বীমায় বার্ষিক সংগৃহীত প্রিমিয়ামের ওপর ব্যবস্থাপনা খরচ ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে। এক থেকে পাঁচ বছরের নীতিতে প্রথম বছরে খরচ ৯৫ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ এবং নবায়নে ২৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করা হবে। ছয় থেকে দশ বছরের নীতিতে প্রথম বছরের খরচ ৯৪ শতাংশ থেকে ৮৪ শতাংশ এবং নবায়নে ২২ শতাংশ থেকে ১৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। আর দশ বছর বা তার বেশি মেয়াদি নীতিতে প্রিমিয়ামভেদে প্রথম বছরের খরচ ধাপে ধাপে ৯৫ শতাংশ থেকে কমে আসবে ৮২ থেকে ৭৬ শতাংশে। এসব নীতির নবায়নে খরচ সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *